ডিমের কিমা

শাকাহারী লোকজনের সাথে একযোগে রান্না করে ডিনার করার একটাই বোধহয় সুবিধে, বেশ কিছু নতুন রেসিপি ট্রাই করার ইচ্ছে জাগে। মানে সবজি-পাতি তো সেই 'থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়'। মাংসাশী লোকেদের কাছে যেরকম অনেক অনেক উপায় থাকে। একদিন মুরগি দিয়ে মুসল্লম, একদিন ট্যাংরা মাছের বাংলা ঝোল, অন্য একদিন ষাঁড়ের লেজের delicacy তো সপ্তাহান্তে হাঁসের রোস্ট কি ব্যাঙের পা ভাজা। কিন্তু এই শাকপাতা খাওয়া লোকজনের সাথে খেতে গেলে একই সবজি দিয়ে নতুন নতুন ডিশ বানানো ছাড়া আর গতি নেই। সেই সুবাদেই আজ একটা নতুন রান্না করলুম আর তারই ফল এই লেখা।

প্রথমেই বলে রাখছি, ডিশটার নাম দেখে যতই ভুরু কোঁচকান না কেন, ডিম কিন্তু নিরামিষ জিনিস। দ্বিতীয় কথাটা হলো, এই রান্নার আইডিয়াটার জন্য একরাশ ধন্যবাদ গুগলের প্রাপ্য। তবে হ্যাঁ, রেসিপিতে নিজস্বতা অফ কোর্স রয়েছে। আর সবশেষে বলি, রান্নাটা এক দাদার সাথে হাত লাগিয়ে হয়েছে। সিংহভাগ কৃতিত্ব তারই পাওনা। তবে নেহাত সে গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত বলে লেখালিখি করে না, তাই ফাঁকতালে কেতা মেরে বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগটা আমি পেয়েছি। তবে চাপ নেই, রেসিপি মেনে রান্নাটা করে ভালো লাগলে মন খুলে প্রশংসা করবেন, কিছুটা আমি তাকে পাঠিয়ে দেব।

যাকগে, এইবার তাহলে কাজের কথায় আসা যাক।

উপকরণ:

ডিম - সাতটা
পেঁয়াজ - মাঝারি সাইজের দুটো
টমেটো - মাঝারি-বড় সাইজের একটা
লংকা - চার-পাঁচটা (বেশ ঝাল যেন হয়)
ধনেপাতা - এক আঁটি
আদাবাটা - দু চামচ
রসুনবাটা - এক চামচ
তেজপাতা - দু-তিনটে
দারচিনি - এক টুকরো
লবঙ্গ, এলাচ - সাত-আটটা করে
গোটা জিরে - অল্প
হলুদ গুড়ো - এক চামচ
জিরে গুড়ো - আধ চামচ
গরম মশলা গুড়ো - এক চামচ
লাল লংকা গুড়ো - পরিমাণমত
তেল - নিজের আন্দাজে
মাখন - দু চামচ
ঘি - এক চামচ
নুন, জল - এ তো লাগবেই

প্রাথমিক প্রস্তুতি:

১. প্রথমে ডিমগুলো সেদ্ধ বসিয়ে দিন, যতক্ষণ না বেশ ভালো সেদ্ধ হয়। আমি কুড়ি মিনিট মত করেছিলাম।
২. এইবার পেঁয়াজ, টমেটো, লংকা আর ধনেপাতা কুচি কুচি করে কেটে ফেলুন। প্রথম তিনটে জিনিস যতটা কুচি করতে পারবেন, ততই ভালো।
৩. ডিমটা সেদ্ধ হয়ে গেলে খোলা ছাড়িয়ে ওগুলোকেও কুচি কুচি করে কেটে ফেলুন। বিনা ভয়ে এইটা করুন। ওই কুসুমের যে অংশগুলো আলাদা হয়ে যাচ্ছে, ঐগুলোই গ্রেভিটাকে থকথকে আর রান্নাটাকে বেশ সুস্বাদু করে তুলবে।

আসল রান্না:

১. কড়াইতে আন্দাজমত (পেঁয়াজ ভাজা হতে যতটা লাগবে তার চেয়ে কিছুটা বেশি) তেল দিয়ে গরম হলে ওতে তেজপাতা, লবঙ্গ, দারচিনি, গোটা জিরে আর এলাচ (ফাটিয়ে নেবেন দেওয়ার আগে) দিয়ে দিন। সামান্য পরে তার মধ্যে পেঁয়াজটা ছেড়ে দিন। অল্প নুন দিন। নাড়তে থাকুন যতক্ষণ না রং (golden brown) ধরে।
২.  পেঁয়াজে রং ধরে গেলে তাতে আদা আর রসুন বাটা দিয়ে দিন। এক মিনিট ধরে ভালো করে মিশিয়ে নিন পেঁয়াজের সাথে।
৩. কুচি করে কাটা লংকা ছেড়ে দিন এইবার। সাথে সামান্য হলুদ মিশিয়ে আর আধ মিনিট মত নাড়ুন।
৪. টমেটো দিয়ে দিন কড়াইতে। আঁচ অল্প করে দিয়ে নাড়তে থাকুন। দেখবেন আস্তে আস্তে তেল ছাড়ছে পাশ থেকে। সেইটাই হচ্ছে ক্লু।
৫. ওটার মধ্যে মাখন দিয়ে আরো দু-তিন মিনিট মত করুন।
৬. এবার বাকি যা যা গুড়ো মশলা, মানে হলুদ, জিরে, লংকা, গরম মশলা পড়ে রয়েছে সেসব দিয়ে দিন একে একে। ভালো মত মিশিয়ে দিন পুরো জিনিসটার সাথে।
৭. অবশেষে আসল জিনিসের পালা। পুরো ডিমটা ঢেলে দিন কড়াইতে আর ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। এতক্ষণ ধরে যে গ্রেভিটা তৈরী হলো তার সাথে যেন ভালো করে মিশে যায়। অল্প অল্প করে জল দিতে থাকুন আর নাড়তে থাকুন। খেয়াল রাখতে হবে আঁচ যেন কম করা থাকে। আন্দাজমত নুনও এসময় দিয়ে দিন।
৮. সাত মিনিট মত এইভাবে একনাগাড়ে নেড়েচেড়ে যখন মনে হবে দেখতে বেশ সুন্দর লাগছে, তখন ধনেপাতার অর্ধেকটা দিয়ে দিন। আবার সামান্য জল দিয়ে আরো তিন মিনিট ধরে পুরো জিনিসটা ভালো করে মেশান। প্রায় তৈরী হয়ে এসেছে আর কি। এবারে শুধু অল্প টেস্ট করে দেখুন নুন-ঝাল ঠিক আছে কিনা। সব ঠিকঠাক মনে হলে আর চিন্তা নেই।
৯. ঘি ছড়িয়ে দিন ওপরে, বাকি ধনেপাতাটা দিয়ে দিন। তারপর ঢেকে দিতে হবে পুরোটাকে। আর আগুনটা নিভিয়ে দিন। এতে একটুক্ষণ স্টিমে থাকবে জিনিসটা।

দশ-পনেরো মিনিট পর ঢাকনা তুলে নিন। ব্যস, তৈরী মারাত্মক সুস্বাদু ডিমের কিমা।


 

Comments

Popular posts from this blog

A three-day affair with Mexico City

An African Diary : A marvellous journey inside the Maasai Mara

অভ্যেস