ক্রিয়েটিভ
"আজকের এই ক্রিয়েটিভ রাইটিং প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছে . . ." সঞ্চালকের ঘোষণা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই স্টেজে উঠে এল ছেলেটা। শৌভনিক ব্যানার্জি। শান্তশিষ্ট চেহারার বাচ্চা ছেলে। পুরস্কার নেওয়ার পর দেখলাম সঞ্চালক ওকে কানে কানে কিছু একটা বলল। ছেলেটা আস্তে করে মাথা নেড়ে দেখলাম উইংসের ভেতর ঢুকে গেল। আসলে আমরাই বলেছিলাম যে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষ হলে ওর সাথে দেখা করতে চাই। ওর লেখা গল্পটা পড়েই মনে হয়েছিল ছেলেটার সাথে একবার দেখা করা উচিত। বাকি জাজেরাও একবাক্যে বলেন যে এরকম যে লেখে তার সাথে একবার দেখা করে লেখালেখি চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দেওয়া উচিত।
অনেকদিন পর এরকম কোনো জায়গায় জাজ হয়ে এসেছি। আমার একসময়ের ছাত্র সম্বিত অনেক জোর করায় আসতে বাধ্য হলাম। এসে দেখি আমি ছাড়া আরও দুজনকে এনেছে এরা। কিন্তু দুজনেই অনেক তরুণ। একে বয়স্ক, প্রবীণ, অভিজ্ঞতা বেশি; তার ওপর বহুদিন ধরে বাংলার সাহিত্যমহলে নাম রয়েছে। তাই বিষয় নির্ধারণ করার ভার আমার ওপরেই পড়েছিল। একটু ভেবে আমি বললাম একটা পরিচ্ছেদ দিয়ে দেওয়া হোক। তার ওপর লিখতে হবে প্রতিযোগীদের। কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প যার যা ইচ্ছে লিখতে পারে। বলা বাহুল্য, কেউই বিন্দুমাত্র আপত্তি করেনি। হয়তো অসম্মান না করার জন্যই। সে যাই হোক, যে পরিচ্ছেদটা দিলাম সেটা এরকম,
"বিকেল গড়িয়ে আস্তে আস্তে সন্ধ্যে হতে চলেছে। আকাশ লাল হয়ে নদীর বুকে তৈরী হচ্ছে এক অসামান্য চিত্রকলা। যেন মকবুল ফিদা হুসেন পরতে পরতে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তার কল্পনার রং। অমিত একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল প্রকৃতির ক্যানভাসটার দিকে। দু'চোখ ভরে উপভোগ করছিল এই অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্য। হঠাৎই চোখ পড়ল বহুদূরে। নদীর বুক চিরে এগিয়ে আসছে একটা নৌকো। নিমেষে অমিতের সদাভাবুক মন পাড়ি জমালো ওই সুদূরের পানে।"
পরিচ্ছেদটা দেওয়ার পরও বেশ সংকোচে ছিলাম বাকিরা কি বলবে। কিন্তু দুজনেই বেশ খুশিমনে নেওয়ায় নিশ্চিন্ত হয়ে হাতের বইটা খুলে বসলাম।
দু'ঘন্টা সময় দেওয়া হয়েছিল সবাইকে। তারপর আমাদের কাজ শুরু। ক্লাস ফাইভ থেকে টুয়েলভের প্রচুর ছাত্রছাত্রী - সবার লেখা পড়ে ফাইনাল ডিসিশন দিতে অনেক সময় তো যাবেই। যদিও আমার ভালোই লাগে বাচ্চাদের লেখা পড়ে দেখতে। এদের অনেকের মধ্যেই অসামান্য প্রতিভা লুকিয়ে থাকে। যথারীতি আজও বেশ কিছু ভালো লেখা পেলাম আমরা। কয়েকটা কবিতা, একটা প্রবন্ধ যেখানে গোধূলিবেলার সৌন্দর্য্য সাহিত্য আর চিত্রকলাকে কিভাবে যুগ যুগ ধরে প্রভাবিত করেছে তার আলোচনা আর তিনটে গল্প মনটাকে খুশি করে দিল। কিন্তু তখনও বুঝিনি একটা বড় চমক অপেক্ষা করছে। শৌভনিকের লেখাটা পড়ে মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি এলো। ছেলেটা অমিতের কল্পনাপ্রবণ মন নিয়ে একটা সুন্দর গল্প লিখে ফেলেছে। ওই নৌকোটা কাছে এগিয়ে এলে বোঝা যায় সেটা আসলে একটা বজরা, আর সেই বজরার ওপর সৌম্য চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। এরপর রবীন্দ্রনাথ, ডাকঘর আর ফিদা হুসেনের মেলবন্ধনে আস্তে আস্তে তৈরী হয়েছে মনকাড়া একটা গল্প। সেখানে অমিত আজকের যুগের অমল। গল্পটা পড়ে বাকি দুজনকেও দেখালাম। নিখিল পড়ে বলল, "এরকম লেখা একটা ক্লাস সেভেনের ছেলে লিখেছে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না দাদা।"
"সত্যি," মুগ্ধ গলায় বলল সমীরণ, "এ লেখা তো যেকোনো বড় পত্রিকায় লুফে নেবে। কি ভাষা!"
"হুঁ . . . আমার মনে হয় ওর সাথে একবার দেখা করা উচিত, কি বলো তোমরা?"
দুজনেই মেনে নিল। সমীরণ বলল, "অবশ্যই। যেরকম ভাষা, সেরকমই কল্পনা। ওটা থেকে এরকম সুন্দর গল্পের প্লট ভাবাটা সত্যিই দারুণ কৃতিত্বের ব্যাপার।"
"সে তো বটেই, কি বলেন দাদা?"
নিখিলের প্রশ্নের উত্তরে ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম, "তাহলে প্রথম পুরস্কারটা নিয়ে আর দ্বিধা রইলো না।"
সবকিছু শেষ হওয়ার পর এখন এই পুরস্কার বিতরণী। তাকিয়ে দেখলাম সঞ্চালক ধন্যবাদজ্ঞাপন শেষ করছে। উঠে দাঁড়ালাম। শৌভনিকের সাথে দেখাটা সেরে ফেলি। তিনজনে উইংসে ঢুকে দেখলাম চুপ করে বসে আছে ছেলেটা। আমাদের দেখে উঠে দাঁড়ালো।
"শৌভনিক, তোমার লেখাটা দারুণ লেগেছে আমাদের। তুমি কি আগে কখনো গল্প লিখেছ?", জিজ্ঞেস করলো সমীরণ।
"খুব বেশি না স্যার। ডায়েরি লিখি এমনিতে। সেখানেই কখনো কখনো এক দুটো গল্প কবিতাও লিখে ফেলি। তা থেকে ওই স্কুল ম্যাগাজিনের জন্য প্রতি বছর লেখা দিই, ব্যাস।"
একটু থেমে যোগ করল ছেলেটা, "আর আমার বাবাও লেখালিখি করেন। খুব বেশি বিখ্যাত নন যদিও। বাবার উৎসাহেই আমার লেখালিখি শুরু।"
"আচ্ছা, সত্যি বলতে কি, তোমার মধ্যে বেশ ভালো প্রতিভা আছে জানো। এরপর থেকে মাঝে মাঝেই যা ইচ্ছে হবে লিখে ফেলবে বুঝলে। আর মা-বাবা বা অন্যদের পড়তে দেবে। কখনো কখনো অন্য ম্যাগাজিনেও পাঠিও, ওরা এরকম লেখা পেলে খুব খুশি হবে," বলল নিখিল।
আমার মাথায় অনেকক্ষণ ধরেই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। এবার জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কি ধরনের বই পড় শৌভনিক?"
"সব ধরনেরই পড়তে ভালো লাগে। যা পাই, তাইই পড়ে ফেলি।" ছেলেটাকে আর বেশিক্ষণ আটকে না রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যেতে বললাম। তিনজনকে প্রণাম করে চলে গেল। আমাদেরও যাওয়ার পালা এবার। সম্বিত এসে জানালো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ঝোলাটা কাঁধে নিলাম।
সবকিছু শেষে সবাইকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠতে যাওয়ার আগে সমীরণ আর নিখিলের দিকে ঘুরলাম, "বুঝলে অনেকক্ষণ ধরে ভাবছিলাম তোমাদের একটা কথা বলব। কিন্তু ঠিক করতে পারছিলাম না জানানো উচিত কি না বা সঠিক সময় কোনটা।"
একটু থেমে ওদের হতবাক মুখের দিকে তাকিয়ে পরিস্কার করলাম ব্যাপারটা, "শৌভনিকের কল্পনা মনে হচ্ছে পুরোটা নিজের নয় বুঝলে। আসলে ওর গল্পটা পড়ে প্রথমেই বহু আগে পড়া একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। সেখানেও প্লটটা প্রায় একই ছিল। তবে সেটাকে নকল আর কি করে বলি? মানে যদি ও সত্যিই ওই গল্পটা পড়ে থাকে, তা হলেও এখানে নিজের ভাষায় লিখেছে। আর আমিও ঠিক শিওর নই আদৌ এটাই ছিল কি না। কার লেখা, কোন গল্প সেসব তো বিন্দুমাত্র মনে নেই। বোঝোই তো পড়ে থাকলেও অনেকদিন আগে পড়া। তাই তখন আমার মনে হয় এটাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত হবে না। ছেলেটাকে যোগ্য কৃতিত্বই দেওয়া যুক্তিযুক্ত। আর দেখো, যদি ঘটনাচক্রে তাই হয়, তা হলেও এই বয়সে আজকালকার যুগে এত বই পড়াটাকেও একটা পুরস্কার দেওয়া উচিত। আর হাজার হোক, তোমাদের কাছে তো ও প্রথম পুরস্কার ছাড়া আর কিছু পেতেই পারে না, তাই না? এই সব ভেবেই তখন আর কিছু বলিনি।"
ওরা দুজন কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না। আর না দাঁড়িয়ে, "যাই হোক, ভালো থেকো," বলে গাড়িতে উঠে পড়লাম।
গাড়িতে বসে মাথা হেলিয়ে ভাবতে থাকলাম পুরো দিনটার কথা। ওদের বললাম বটে, কিন্তু আমি পরিস্কার মনে করতে পারছি গল্পটার কথা। আর আমি এটাও নিশ্চিত যে ছেলেটা গল্পটা পড়েছে এবং ওর লেখা সেটা থেকেই অনুপ্রাণিত। কিন্তু তাও ওকে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করতে পারলাম না। যাকগে এসব নিয়ে আর ভেবে কি হবে! নকল তো অল্পবিস্তর সবাই করে। ব্যাগ থেকে বইটা আবার বের করলাম। পারিজাত ব্যানার্জি নামে এক অখ্যাত লেখকের ছোটগল্পের বই। বইমেলা থেকে এরকম কিছু বই আমি বরাবরই কিনি। কি মনে হতে সকালে পড়া গল্পটা আবার পড়তে শুরু করলাম, "বিকেল গড়িয়ে আস্তে আস্তে সন্ধ্যে হতে চলেছে। আকাশ লাল হয়ে নদীর বুকে তৈরী হচ্ছে এক অসামান্য চিত্রকলা। যেন মকবুল ফিদা হুসেন . . ."
অনেকদিন পর এরকম কোনো জায়গায় জাজ হয়ে এসেছি। আমার একসময়ের ছাত্র সম্বিত অনেক জোর করায় আসতে বাধ্য হলাম। এসে দেখি আমি ছাড়া আরও দুজনকে এনেছে এরা। কিন্তু দুজনেই অনেক তরুণ। একে বয়স্ক, প্রবীণ, অভিজ্ঞতা বেশি; তার ওপর বহুদিন ধরে বাংলার সাহিত্যমহলে নাম রয়েছে। তাই বিষয় নির্ধারণ করার ভার আমার ওপরেই পড়েছিল। একটু ভেবে আমি বললাম একটা পরিচ্ছেদ দিয়ে দেওয়া হোক। তার ওপর লিখতে হবে প্রতিযোগীদের। কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প যার যা ইচ্ছে লিখতে পারে। বলা বাহুল্য, কেউই বিন্দুমাত্র আপত্তি করেনি। হয়তো অসম্মান না করার জন্যই। সে যাই হোক, যে পরিচ্ছেদটা দিলাম সেটা এরকম,
"বিকেল গড়িয়ে আস্তে আস্তে সন্ধ্যে হতে চলেছে। আকাশ লাল হয়ে নদীর বুকে তৈরী হচ্ছে এক অসামান্য চিত্রকলা। যেন মকবুল ফিদা হুসেন পরতে পরতে ছড়িয়ে দিচ্ছেন তার কল্পনার রং। অমিত একদৃষ্টে তাকিয়ে ছিল প্রকৃতির ক্যানভাসটার দিকে। দু'চোখ ভরে উপভোগ করছিল এই অবর্ণনীয় সৌন্দর্য্য। হঠাৎই চোখ পড়ল বহুদূরে। নদীর বুক চিরে এগিয়ে আসছে একটা নৌকো। নিমেষে অমিতের সদাভাবুক মন পাড়ি জমালো ওই সুদূরের পানে।"
পরিচ্ছেদটা দেওয়ার পরও বেশ সংকোচে ছিলাম বাকিরা কি বলবে। কিন্তু দুজনেই বেশ খুশিমনে নেওয়ায় নিশ্চিন্ত হয়ে হাতের বইটা খুলে বসলাম।
দু'ঘন্টা সময় দেওয়া হয়েছিল সবাইকে। তারপর আমাদের কাজ শুরু। ক্লাস ফাইভ থেকে টুয়েলভের প্রচুর ছাত্রছাত্রী - সবার লেখা পড়ে ফাইনাল ডিসিশন দিতে অনেক সময় তো যাবেই। যদিও আমার ভালোই লাগে বাচ্চাদের লেখা পড়ে দেখতে। এদের অনেকের মধ্যেই অসামান্য প্রতিভা লুকিয়ে থাকে। যথারীতি আজও বেশ কিছু ভালো লেখা পেলাম আমরা। কয়েকটা কবিতা, একটা প্রবন্ধ যেখানে গোধূলিবেলার সৌন্দর্য্য সাহিত্য আর চিত্রকলাকে কিভাবে যুগ যুগ ধরে প্রভাবিত করেছে তার আলোচনা আর তিনটে গল্প মনটাকে খুশি করে দিল। কিন্তু তখনও বুঝিনি একটা বড় চমক অপেক্ষা করছে। শৌভনিকের লেখাটা পড়ে মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি এলো। ছেলেটা অমিতের কল্পনাপ্রবণ মন নিয়ে একটা সুন্দর গল্প লিখে ফেলেছে। ওই নৌকোটা কাছে এগিয়ে এলে বোঝা যায় সেটা আসলে একটা বজরা, আর সেই বজরার ওপর সৌম্য চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। এরপর রবীন্দ্রনাথ, ডাকঘর আর ফিদা হুসেনের মেলবন্ধনে আস্তে আস্তে তৈরী হয়েছে মনকাড়া একটা গল্প। সেখানে অমিত আজকের যুগের অমল। গল্পটা পড়ে বাকি দুজনকেও দেখালাম। নিখিল পড়ে বলল, "এরকম লেখা একটা ক্লাস সেভেনের ছেলে লিখেছে আমি বিশ্বাস করতে পারছি না দাদা।"
"সত্যি," মুগ্ধ গলায় বলল সমীরণ, "এ লেখা তো যেকোনো বড় পত্রিকায় লুফে নেবে। কি ভাষা!"
"হুঁ . . . আমার মনে হয় ওর সাথে একবার দেখা করা উচিত, কি বলো তোমরা?"
দুজনেই মেনে নিল। সমীরণ বলল, "অবশ্যই। যেরকম ভাষা, সেরকমই কল্পনা। ওটা থেকে এরকম সুন্দর গল্পের প্লট ভাবাটা সত্যিই দারুণ কৃতিত্বের ব্যাপার।"
"সে তো বটেই, কি বলেন দাদা?"
নিখিলের প্রশ্নের উত্তরে ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম, "তাহলে প্রথম পুরস্কারটা নিয়ে আর দ্বিধা রইলো না।"
সবকিছু শেষ হওয়ার পর এখন এই পুরস্কার বিতরণী। তাকিয়ে দেখলাম সঞ্চালক ধন্যবাদজ্ঞাপন শেষ করছে। উঠে দাঁড়ালাম। শৌভনিকের সাথে দেখাটা সেরে ফেলি। তিনজনে উইংসে ঢুকে দেখলাম চুপ করে বসে আছে ছেলেটা। আমাদের দেখে উঠে দাঁড়ালো।
"শৌভনিক, তোমার লেখাটা দারুণ লেগেছে আমাদের। তুমি কি আগে কখনো গল্প লিখেছ?", জিজ্ঞেস করলো সমীরণ।
"খুব বেশি না স্যার। ডায়েরি লিখি এমনিতে। সেখানেই কখনো কখনো এক দুটো গল্প কবিতাও লিখে ফেলি। তা থেকে ওই স্কুল ম্যাগাজিনের জন্য প্রতি বছর লেখা দিই, ব্যাস।"
একটু থেমে যোগ করল ছেলেটা, "আর আমার বাবাও লেখালিখি করেন। খুব বেশি বিখ্যাত নন যদিও। বাবার উৎসাহেই আমার লেখালিখি শুরু।"
"আচ্ছা, সত্যি বলতে কি, তোমার মধ্যে বেশ ভালো প্রতিভা আছে জানো। এরপর থেকে মাঝে মাঝেই যা ইচ্ছে হবে লিখে ফেলবে বুঝলে। আর মা-বাবা বা অন্যদের পড়তে দেবে। কখনো কখনো অন্য ম্যাগাজিনেও পাঠিও, ওরা এরকম লেখা পেলে খুব খুশি হবে," বলল নিখিল।
আমার মাথায় অনেকক্ষণ ধরেই প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল। এবার জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি কি ধরনের বই পড় শৌভনিক?"
"সব ধরনেরই পড়তে ভালো লাগে। যা পাই, তাইই পড়ে ফেলি।" ছেলেটাকে আর বেশিক্ষণ আটকে না রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যেতে বললাম। তিনজনকে প্রণাম করে চলে গেল। আমাদেরও যাওয়ার পালা এবার। সম্বিত এসে জানালো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ঝোলাটা কাঁধে নিলাম।
সবকিছু শেষে সবাইকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠতে যাওয়ার আগে সমীরণ আর নিখিলের দিকে ঘুরলাম, "বুঝলে অনেকক্ষণ ধরে ভাবছিলাম তোমাদের একটা কথা বলব। কিন্তু ঠিক করতে পারছিলাম না জানানো উচিত কি না বা সঠিক সময় কোনটা।"
একটু থেমে ওদের হতবাক মুখের দিকে তাকিয়ে পরিস্কার করলাম ব্যাপারটা, "শৌভনিকের কল্পনা মনে হচ্ছে পুরোটা নিজের নয় বুঝলে। আসলে ওর গল্পটা পড়ে প্রথমেই বহু আগে পড়া একটা গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। সেখানেও প্লটটা প্রায় একই ছিল। তবে সেটাকে নকল আর কি করে বলি? মানে যদি ও সত্যিই ওই গল্পটা পড়ে থাকে, তা হলেও এখানে নিজের ভাষায় লিখেছে। আর আমিও ঠিক শিওর নই আদৌ এটাই ছিল কি না। কার লেখা, কোন গল্প সেসব তো বিন্দুমাত্র মনে নেই। বোঝোই তো পড়ে থাকলেও অনেকদিন আগে পড়া। তাই তখন আমার মনে হয় এটাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত হবে না। ছেলেটাকে যোগ্য কৃতিত্বই দেওয়া যুক্তিযুক্ত। আর দেখো, যদি ঘটনাচক্রে তাই হয়, তা হলেও এই বয়সে আজকালকার যুগে এত বই পড়াটাকেও একটা পুরস্কার দেওয়া উচিত। আর হাজার হোক, তোমাদের কাছে তো ও প্রথম পুরস্কার ছাড়া আর কিছু পেতেই পারে না, তাই না? এই সব ভেবেই তখন আর কিছু বলিনি।"
ওরা দুজন কি বলবে বুঝে পাচ্ছে না। আর না দাঁড়িয়ে, "যাই হোক, ভালো থেকো," বলে গাড়িতে উঠে পড়লাম।
গাড়িতে বসে মাথা হেলিয়ে ভাবতে থাকলাম পুরো দিনটার কথা। ওদের বললাম বটে, কিন্তু আমি পরিস্কার মনে করতে পারছি গল্পটার কথা। আর আমি এটাও নিশ্চিত যে ছেলেটা গল্পটা পড়েছে এবং ওর লেখা সেটা থেকেই অনুপ্রাণিত। কিন্তু তাও ওকে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করতে পারলাম না। যাকগে এসব নিয়ে আর ভেবে কি হবে! নকল তো অল্পবিস্তর সবাই করে। ব্যাগ থেকে বইটা আবার বের করলাম। পারিজাত ব্যানার্জি নামে এক অখ্যাত লেখকের ছোটগল্পের বই। বইমেলা থেকে এরকম কিছু বই আমি বরাবরই কিনি। কি মনে হতে সকালে পড়া গল্পটা আবার পড়তে শুরু করলাম, "বিকেল গড়িয়ে আস্তে আস্তে সন্ধ্যে হতে চলেছে। আকাশ লাল হয়ে নদীর বুকে তৈরী হচ্ছে এক অসামান্য চিত্রকলা। যেন মকবুল ফিদা হুসেন . . ."
unique one,...
ReplyDelete